শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৩২ অপরাহ্ন
ওসমান এহতেসাম :
সাংবাদিকতা বর্তমান সময়ে একটি মহৎ পেশা। সাংবাদিকরা দেশের জাগ্রত বিবেক। একজন সাংবাদিককে সকল পেশার মানুষ অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। তাই জ্ঞানী, গুণী, কবি-সাহিত্যিকরা বলে থাকেন, সাংবাদিকদের কলমের ক্ষমতা তরবারির চেয়ে ধারালো ও শক্তিশালী। কলম এমন একটি অস্ত্র যা সর্বাধুনিক মারণাস্ত্রের চেয়েও মারাত্মক। এই কলমের সামান্য দুই ফোঁটা কালি পৃথিবীর সমস্ত ধনসম্পদের চেয়েও বেশি মূল্যবান। সেই কলম যখন কোনো সাংবাদিকের হাতের অস্ত্র হয় তখন তার ক্ষমতাও বেড়ে যায় অন্তহীনভাবে।
কিন্তু বর্তমান সময়ে সাংবাদিকতা পেশা বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক কারণে তুমুল আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি করেছে। নিষ্পাপ কিশোরীর মতো সাংবাদিকতাও এখন ধর্ষিত হচ্ছে। আর এই ধর্ষণের ধর্ষক হলো অপসাংবাদিক। ১০০০ টাকা দিয়ে অনলাইন খুলেই সম্পাদক হয়ে যাচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা এখানে চতুর্থ বিষয়। প্রযোয্য নহে।
ফেসবুকে পোস্ট করেই এরা বলে টিভি নিউজ। সারা জীবন দেখে আসলাম আগামীকালের পত্রিকা ছাপা হয় রাত ১২ টার পরে। অথচ এখন দেখি যখনকার ঘটনা তার কিছুক্ষণ পরই পত্রিকাতে প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে। এ আবার কি ধরণের সামবাদিকতা ! পরের দিনের সংবাদ আগের দিনেই প্রকাশ। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়-ওটা পত্রিকা না। পত্রিকার মতো পোস্টার করে ওরা। তারপর ছেড়ে দেয় ফেসবুকে। অযোগ্য সম্পাদকের পোর্টালে নিয়োগ পায় অযোগ্য সব প্রতিনিধি। টাকা দিয়ে হয়ে যাচ্ছে স্টাফ রিপোর্টার, সিনিয়র রিপোর্টার ও জেলা প্রতিনিধি।
এর মধ্যে রয়েছে কুলি থেকে শুরু করে দিনমজুর, চা বিক্রেতা, পান বিক্রেতা, রিকশা চালক, ভ্যান চালক, মাদক ব্যবসায়ী, মাদকাসক্ত, গরুর দালাল, থানার দালাল, জমির দালালসহ মূর্খ আর অশিক্ষিত এক শ্রেণির মানুষ। তারা রাতারাতি সাংবাদিক হয়ে কিশোর গ্যাং এর ন্যায় সাংবাদিকতা পেশায়ও আজকাল এক শ্রেণির গ্যাং তৈরি হয়েছে।
এরাও কিশোর গ্যাংয়ের মতো দল বেঁধে প্রতিদিন ধান্দাবাজিতে মেতে ওঠেন। কথায় আছে ‘বাপে মরছে আন্ধারে, ছেলের নাম বিদ্যুৎ’। তেমনি মিডিয়া প্রকাশ ও প্রচারের খবর নাই তিনি বড় মাপের সাংবাদিক। সাংবাদিক পরিচয়ধারী কিছু অপসাংবাদিকের ফেসবুকের স্ট্যাটাস দেখলে লজ্জায় মাথা নিঁচু হয়ে যায়। এক লাইন স্ট্যাটাসের ৮০ ভাগই বানান ভুল থাকে। লিখতে গেলে আমারও ভুল হয়, তাই বলে ১০টি শব্দ লিখলে যদি ৮টা শব্দের বানান ভুল হয় সে কি করে সাংবাদিক হয়!
অনেকে আবার সাংবাদিকদের সংগঠনে নিজের নামটা লিখিয়ে নেয়, তা না হলে নিজেরাই কিছু একটা ভূইফোঁড় সংগঠন খুলে বসেন। ভূয়া সাংবাদিকের নানা অপকর্মের কারণে প্রকৃত পেশাদার সাংবাদিকদের ভাবমূর্তি এখন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার উপক্রমহয়েছে। একশ্রেণীর এসব টাউট-বাটপারদের কারণে পেশাদার সাংবাদিকগণ পেশাগতদায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনার মুখে পড়ছে।
এ সকল সাংবাদিকদের মানবিক, জনদুর্ভোগ কিংবা উন্নয়নমূলক কোন প্রতিবেদন তৈরি করতে দেখা যায় না। লিখবেই কিভাবে? লিখতে পারলেই তো! কোথাও সড়ক দুর্ঘটনা কিংবা হত্যাকান্ড ঘটলে ঘটনাস্থলেও তাদের চোখে পড়েনা। কারণ এ সকল সংবাদ সংগ্রহে কোন অর্থ পাওয়া যায় না। বরং আরো নিজের পকেট থেকে যায়। এদের বেশি দেখা যায় সংবাদ সম্মেলনের স্থানে, গ্রামের আনাচে-কানাচে দিয়ে। গ্রামের সরল-সহজ মানুষগুলোকে রীতিমতো সাংবাদিকতার ভয় দেখিয়ে এরা হাতিয়ে নেয় টাকা। অথচ এরাই গাড়ির সামনে প্রেস লেখা স্টিকার লাগিয়ে দাপিয়ে বেড়ান পুরো জেলা-উপজেলায়। সাংবাদিকতার মতো পবিত্রতম পেশাটাকে এরা কলংকিত করে রীতিমতো উলঙ্গ করে ফেলছে।
একজন প্রকৃত সাংবাদিক এটা কখনোই ভালোভাবে নিতে পারেন না। তাই এ সকল আপ-সাংবাদিকদের বিপক্ষে কথা বলতে হবে প্রকৃত সাংবাদিকদেরই। সাংবাদিকতার নামে যে পবিত্রতা আছে তা রক্ষার্থেই এগুলো দমন করতে হবে। এ দায়িত্ব একজন স্বচ্ছ সাংবাদিকের ওপর স্বাভাবিক নিয়মেই বর্তায়। যিনি নিজেকে দায়িত্ববান সাংবাদিক দাবি করবেন তারই দায়িত্ব অপসাংবাদিক রোধ করা। একইভাবে মূলধারার গণমাধ্যমের উচিত ভুঁইফোড় রোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করা।
বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ নিজামুল হক নাসিম সম্প্রতি বলেছেন, দেশের প্রকৃত সাংবাদিকদের নিয়ে ডাটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে। সাংবাদিক পরিচয় দিতে প্রেস কাউন্সিলের সনদ পেতে হবে। এছাড়া কেউ সাংবাদিক পরিচয় দিতে পারবে না। গ্র্যাজুয়েট ছাড়া কেউ সাংবাদিকতায় আসার সুযোগ পাবে না। তবে যারা ইতোমধ্যে সাংবাদিকতায় পাঁচ বছরের বেশি সময় কাটিয়েছেন তাদের শিক্ষাক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে। বুধবার (৩১ মে) দুপুরে নাটোর সার্কিট হাউসে ‘প্রেস কাউন্সিল আইন ১৯৭৪ ও আচরণবিধি এবং তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ অবহিতকরণ’ বিষয়ে জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে সেমিনার ও মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
পত্রিকায় বিচারপতি মোহাম্মদ নিজামুল হকের এমন বক্তব্য পড়ে আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি। তার এই সিদ্ধান্তকে মন থেকে সাধুবাদ জানাই ও সমর্থন করি। কিন্তু শতভাগ সমর্থন করতে পারছি না। কেবল সনদ প্রক্রিয়াকে কার্যকর করলেই যে অপসংবাদিকতা রোধ করা যাবে তা আমি বিশ্বাস করিনা। বিশ্বাস না করার মতো নানা কারণও রয়েছে। এই যে বলা হলো- যারা সাংবাদিকতায় পাঁচ বছরের বেশি সময় কাটিয়েছেন তাদের শিক্ষাক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে, আমি মনে করি এতে অনেকেই ফায়দা লুটবে। অপসাংবাদিকরা টাকার বিনিময়ে ৫ বছরের নিয়োগপত্র কিনে নিবেন। যেকোনো মূল্যে তারা থেকে যাবেন সাংবাদিকতায়! তাহলে এই সনদের কি মূল্যইবা রইল।
এছাড়া আমি সাংবাদিকতায় নবীন হলেও এই কম সময়ের মধ্যেই অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। কেউ যদি আমার অভিজ্ঞতার কথা জানতে চান তাহলে বলব, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত ও দক্ষ সাংবাদিকরা কখনোই অপসংবাদিক নয়। অপসংবাদিক হলেন তারা, যারা নানামুখী অপকর্ম করে অপকর্ম থেকে বাঁচতে সাংবাদিকতায় আসেন। এটি স্পষ্ট যে, প্রথমে অপকর্ম করে দ্বিতীয় দফায় অপকর্ম করতে সাংবাদিকতায় আসেন। তাই এমন অপকর্মের অপসংবাদিকদের প্রতিরোধ করতে সনদ প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট নয়। আইনে যুক্ত করতে হবে আরো কিছু নিয়মাবলী। তাই অনতিবিলম্বে আইনে যুক্ত করা যায় এমন কিছু যুক্তি তুলে ধরছি।
১। ডোপ টেস্ট প্রক্রিয়া চালু করা:
কোনো ব্যক্তি আদৌ মাদকাসক্ত কি না তা যাচাইয়ের জন্য যে মেডিকেল পরীক্ষা করা হয় তাকেই ডোপ টেস্ট বলে। বর্তমানে মাদকাসক্তদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে একেবারে বৃদ্ধ পর্যন্ত সব বয়সীরাই মাদকে আসক্ত হয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে নিজেকে। এসব কারণেই মূলত ডোপ টেস্ট করানো হয়। এছাড়া আরও যেসব কারণে ডোপ টেস্ট করানো হয়ে থাকে তা হলো- বিভিন্ন সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি সকল চাকরিতে প্রবেশকালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সঙ্গে মাদক পরীক্ষার সনদ বা ডোপ টেস্টের রিপোর্ট জমা দিতে হয়। এমনকি ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্যও এই পরীক্ষা করানো হয়।
নতুন আইন অনুসারে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইলেও ডোপ টেস্ট করাতে হবে। অস্ত্রের লাইসেন্স করতেও ডোপ টেস্টের রিপোর্ট জমা দিতে হয়। কেবল সাংবাদিক হতেই ডোপ টেস্ট রিপোর্ট জমা দিতে হয় না। আর আইনের এসব সহজ সমীকরণে সাংবাদিকতায় যদি মাদকাসক্ত ব্যক্তির আগমন ঘটে তবে তা হুমকি স্বরুপ। তার অসুস্থ সাংবাদিকতায় তিনি চাইলে যে কোনো ভালো মানুষকেও অসুস্থ বানিয়ে দিতে পারবে। তাই সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে আমার প্রথম দাবি- এ পেশায় ডোপ টেস্ট এর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এতে প্রায় ত্রিশ শতাংশ সাংবাদিক পরিচয়ধারী অপ- ব্যক্তিরা হারিয়ে যাবে। ফিরে আসবে সাংবাদিকতার সুদিন। একজন সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে গর্ববোধ করবে প্রকৃত কলম যোদ্ধারা। ডোপ টেস্ট আইনে পরিণত হোক- এটিই আমাদের প্রত্যাশা। এতে কোন মাদক ব্যবসায়ী মাদক ব্যবসা করতে আর প্রেস কার্ড ব্যবহারের সুযোগ নিতে পারবে না।
২। নিয়োগের আগে পুলিশ ভেরিফিকেশন ও ফৌজদারী মামলায় চাকরি না হওয়া
আমরা জানি বর্তমানে সরকারী, আধা-সরকারী সহ বিভিন্ন ব্যাংকের চাকুরিতে চূড়ান্ত নিয়োগের পূর্বে শক্ত-পোক্ত পুলিশ ভেরিফিকেশন করা হয়। কোন কোন সরকারী চাকুরীতে ৩ স্তর বিশিষ্ট ভেরিফিকেশন করা হয় পুলিশ, এসবি এবং এনএসআই এর স্বমন্বয়ে। দূর্ভাগ্য বশত কেউ যদি কোন ফৌজদারী মামলায় অভিযুক্ত হয়ে থাকেন সে ক্ষেত্রে হাতে পেয়েও হাত ছাড়া হতে পারে তার চাকুরী নামের সোনার হরিণ! ফৌজদারী মামলা বলতে চুরি, ডাকাতি, হত্যা, রাহাজানি, অপহরণ, ধর্ষন সহ বিভিন্ন গণশান্তি বিরোধী অপরাধ সমূহকে বুঝাচ্ছি।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে সাংবাদিকতার মতো একটি মহান পেশায় এ আইনটি চালু নেই। ফলে ফৌজদারী মামলার অগণিত আসামী এখন সাংবাদিক ও সম্পাদক। টিভিতে দেখলাম যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে যখন গ্রেফতার হয় তার কাছেও প্রেস কার্ড। সাংবাদিক পরিচয় দিয়েই ১৪ বছর গ্রেফতার এড়িয়েছেন ওই লোক। শুধু হত্যা ও ধর্ষণ মামলার আসামি নয়, মাদক মামলার মাদক ব্যবসায়ীরা সাংবাদিক সেঁজে করছেন মাদকের রমরমা ব্যবসা। এড়িয়ে চলছে। এড়িয়ে চলছে মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা। এটি দুঃখজনক ও লজ্জার। তাই এ পেশার মর্যাদা ফেরাতে এখনই আইনটি নিয়ে ভাবা উচিত। কেবল ভাবলেই হবে না কার্যকরও করা উচিত। নয়তো এ পেশার চলমান ধর্ষণ বন্ধ করা সহজ হবে না। তাই অতি বিলম্বে এমন একটি আইন করা হোক- যেখানে উল্লেখ থাকবে ফৌজদারী মামলার আসামিরা সাংবাদিক হতে পারবে না।
৩। নির্ধারণ করতে হবে শিক্ষাগত যোগ্যতা:
একজন সাংবাদিকের সর্বনিম্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা কি হবে তা অবশ্যই প্রস কাউন্সিলকে নির্ধারণ করতে হবে। সাম্প্রতিক বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ নিজামুল হক নাসিম বলেছেন, গ্র্যাজুয়েট ছাড়া কেউ সাংবাদিকতায় আসার সুযোগ পাবে না। তবে এক্ষেত্রে আমি মনে করি আরও ছাড় দেওয়া প্রয়োজন। কেননা যারা এইচএসসির পর সাংবাদিকতায় ডিপ্লোমা করেছে তাদের কি হবে? তাদের পরিশ্রমের এ ডিপ্লোমা কি অকার্যকর? তাও প্রেস কাউন্সিলকে পরিষ্কার করতে হবে। অন্যদিকে জোর দিয়ে বলা যায়, লেখালেখি চর্চার বিষয়।
এর জন্য বেশি শিক্ষার প্রয়োজন হয় না- ইচ্ছে থাকলেই ভালো লেখক হওয়া সম্ভব। পত্রিকার পাতায় প্রায় দেখা যায়, এসএসসি/এইএসসি পাশ করা সাংবাদিকদের অনেকেই ভালো করছে। আবার উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করে ভালো লিখতে পারছে না। তাহলে এক্ষেত্রে যোগ্যতা বিবেচিত হবে কিভাবে? তাই শিক্ষার পাশাপাশি লেখকের লেখার মূল্যয়নও বেশ জরুরি। তারপরেও সাংবাদিকের সর্বনিম্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা কি হবে তা জানিয়ে দেওয়াই উত্তম বলে মনে করি। এতে সাংবাদিক পরিচয়ধারী চা-পান বিক্রেতা, রিকশা চালক, পুলিশের সোর্স, আদালতে ঘুরে বেড়ানো দালালদের পতন হবে সুনিশ্চিত।
৪। প্রেস কাউন্সিল সনদ ও পরীক্ষা:
প্রেস কাউন্সিল সনদ এর মূল্যয়ন হতে পারে
আইনজীবীদের বার কাউন্সিলের মতো পরীক্ষা পদ্ধটি। এ পদ্ধতিতে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। এতে যারা পাশ করবে তারাই কেবল সনদ এর যোগ্য বলে বিবেচিত হবে এবং সনদ পাবে। এমন নিয়ম করতে পারলে সাংবাদিকতার মান বহুগুণ বাড়বে বলে মনে করি।
৫। প্রেস কাউন্সিল সনদ ও নিয়োগ প্রক্রিয়া:
সাংবাদিক পরিচয় দিতে প্রেস কাউন্সিলের সনদ পেতে হবে। এছাড়া কেউ সাংবাদিক পরিচয় দিতে পারবে না। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের এমন যুগোপোযী সিদ্ধান্তকে জানাই ধন্যবাদ ও অফুরন্ত ভালোবাসা। তবে এর সাথে আরও কিছু বিষয় যুক্ত করলে ভালো হয়। যেমন আগামীতে যারা সাংবাদিকতায় আসবে তাদের শর্ত পূরণ সাপেক্ষে এ সনদ দেওয়া যেতে পারে। এ সনদ ছাড়া কোন সম্পাদক যেন টাকার বিনিময়ে চা বিক্রেতাকে নিয়োগ দিতে না পারে সে বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। অর্থাৎ সাংবাদিক নিয়োগ প্রক্রিয়াটা যেন বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলকে অবগত করে করতে হয়। তাহলে অযোগ্যদের সাংবাদিক হওয়ার সুযোগ থাকবে না।
৬। প্রেস কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে সাংবাদিকদের তালিকা প্রকাশ:
সাংবাদিকতার মতো এত বড় একটি খাতে এতদিন সাংবাদিকদের কোনো ডেটাবেস ছিল না। যে সে সাংবাদিক পরিচয়ে প্রতারণা করে মহান এ পেশাটিকে কলঙ্কিত করছে। এসব বন্ধে প্রেস কাউন্সিলের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এ ছাড়া ডেটাবেস থাকলে দেশে কি পরিমাণ সাংবাদিক আছেন, তারা কে, কোথায় কাজ করেন ইত্যাদি বিষয়ও সহজেই জানা যাবে। প্রেস কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে সাংবাদিকদের তালিকা থাকলে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কেউ আর প্রতারণা করতে পারবে না। তাই সাংবাদিকদের নিয়ে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করার পর প্রকৃত সাংবাদিকদের তথ্য বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হোক।
৭। প্রেস কাউন্সিল ও লেখা চোর:
লিখতে পারেনা নাম, সাধারণদের কাছে তিনিই খ্যাতিমান লেখক। এমন খ্যাতিমান লেখক বাংলাদেশে কম নেই। যারা অন্যের লেখা চুরি করে নিজের নামে ছাপিয়েছে কাড়ি কাড়ি লেখা। সম্প্রতিক কয়েকদিন আগের কথা। দৈনিক ইত্তেফাক ও দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদকের লেখা চুরি করে সুমন সেন নামের এক ব্যাক্তি। তারপর নিজের প্রকাশিত একটি ম্যাগাজিনে নিজের নাম ও ছবি ব্যবহার করে হুবুহু কলামটি নিজের নামে ছাপিয়েছে দিলেন! আমি এর প্রতিবাদ করায় তিনি মদ খেয়ে আমার উপর আক্রমন করেন। পরে আমি ৯৯৯ এ কল দিয়ে নিজেকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম বাকলিয়া থানায় একটি জিডি করি। পরিনাম সম্পর্কে সচেতন থাকাই উত্তম- এটি দৈনিক ইত্তেফাক সম্পাদকের লেখা সম্পাদকীয় কলাম।
যা ইত্তেফাকে প্রকাশিত হয় ০৭ আগস্ট ২০২২। লেখায় কোন ধরনের পরিবর্তন না এনে একই শিরোনামে নিজের নামে নিজের অনলাইন একাত্তরে প্রচার করেন তিনি। চুরি কেবল ইত্তেফাকের সাথেই করেননি, চুরি করেছেন দ্য ডেইলি স্টার এর সাথেও। ‘প্লাস্টিক দূষণ বন্ধ করতে হবে’- এটি দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদকের লেখা। যা ২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বর প্রকাশিত হয় (জিডি ও নকল এর তথ্য প্রমাণ আছে)। একটি প্রবাদ আছে, চুরির বিদ্যা বড় বিদ্যা, যদি না পড়ে ধরা। তিনি চুরি করে নিজের নাম দিয়ে ছাপালেন ২০২২ সালের ১৫ আগষ্ট। চুরি যে শুধু তিনিই করছেন এমনটা নয়। এমন অগণিত চোর রয়েছে এদেশে। তাই এদের চুরির সাংবাদিকতা থামাতে এখনই কঠোর হওয়া প্রয়োজন। প্রেস কাউন্সিলের উচিত লেখা চোর প্রমাণিত হলে তাদের এ পেশায় অবাঞ্চিত ঘোষণা করা। তাহলে প্রকৃত সাংবাদিকরাই টিকে থাকবে যুগযুগ।
৮। অযোগ্যদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ:
সাংবাদিকতা পেশায় আসতে সর্বনিম্ন যোগ্যতা যাদের থাকবে না তাদের বিরুদ্ধে চিঠি ইস্যু করে মিডিয়া প্রতিষ্ঠান ও জেলা-উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে পাঠাতে হবে।
বাছাই করা অযোগ্যদের প্রতিটি সাংবাদিক সংগঠন থেকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করতে হবে। অযোগ্য জেনেও যদি তাদের বিরুদ্ধে যদি প্রয়োজনীয় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয়, তাহলে এই অপসংবাদিকতা কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।
৯। প্রেসের অপব্যবহার ও প্রশাসন
সাংবাদিক নয়, কিন্তু গাড়িতে প্রেসের স্টিকার। প্রায় এমন দৃশ্য চোখে। কেউ কেউ প্রেস এর স্টিকার লাগিয়ে কাগজপত্র বিহীন অবৈধ গাড়ি চালায়, কেউ আবার মাদক মাদক পরিবহনে ব্যবহার করে, কেউ আছে যাত্রীর ভাড়া টানে। যা ঘৃণিত ও ফৌজধারী অপরাধ। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় এসব বিষয় নিয়ে প্রকৃত সাংবাদিকরা সংবাদ প্রকাশ করলেও ব্যবস্থা নেয় না প্রশাসন। এতে বুক ফুলিয়ে শহরাঞ্চল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই চক্রটি। তবে এতে প্রশাসনেরও দায়বদ্ধতা আছে বলে আমি মনে করি। তাই প্রশাসনের উচিত হবে কেউ এ ধরনের অভিযোগ দিলে জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো আইনে পরিণত করে কার্যকর করা গেলে অপসাংবাদিকতা অনেকটাই রোধ হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। ফিরে আসবে সাংবাদিকতার সোনালী দিন। তাই প্রেস কাউন্সিলের নিকট নিবেন-কথায় নয়, কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে আমাদের বাধিত করবেন। উপরোক্ত নিয়মাবলী অনুসরণ না করে কাউকেই যেন প্রেস কাউন্সিলের সনদ দেওয়া না হয় তারও জোর দাবি জানাচ্ছি।